উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর তিনি:
শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখান নিজে কিছু একটা করার। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উত্সাহ ও সাহস যোগান। স্বপ্ন দেখান উদ্যোক্তা হয়ে নিজের ভাগ্যকে বদলে দেবার। যিনি এক হাজার উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তা তৈরির এই কারিগর হচ্ছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলাদিন কিডস ডট কমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল বাহার। তিনি আগামী দু’বছরে হাজার খানেক তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিতে চান। সেই লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইকবাল বাহার পড়াশুনা করেছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। কিছুদিন কাজ করেছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে। তবে রেডিওতে এখনও নিয়মিত সংবাদ পাঠ করেন। এটা তার পেশা নয়, নেশা বলে জানালেন এই উদ্যোক্তা।
সময়টা ২০০৩ সাল। নিজে কিছু করার আশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে অপটিম্যাক্স কমিউনিকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলাদিন কিডস ডট কম চালু করেন। উদ্যোক্তা হওয়ার পর বিবেকের তাড়নায় সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন।
তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করা কিভাবে শুরু, জানতে চাইলে ইকবাল বলেন, শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের চাকরি না পাওয়ার হতাশা দেখে ২০১৬ সালে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করার চিন্তা মাথায় আসে। এরপর থেকে শুরু করি উদ্যোক্তা তৈরির কাজ। চষে বেড়াই সারা দেশ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ও জেলা শহরে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। এভাবেই তরুণদের উত্সাহ যুগিয়ে পথচলা শুরু। পরবর্তীতে নিজ অর্থ খরচ করে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে ১৬৪ জন তরুণ-তরুণীকে বাছাই করে উদ্যোক্তা তৈরির কাজ শুরু করি। ফেসবুকে ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প’ নামে একটি ক্লোজড গ্রুপ খুলে অনলাইনে টানা ৯০ দিন কর্মশালা পরিচালনা করি।
বাহার বলেন, ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি শুরু করেন ‘নিজের বলার মত একটা গল্প’ প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ। টানা ৯০ দিনের কর্মশালা শেষে তরুণ-তরুণীদের উদ্বুদ্ধ করতে গত ৩০ মার্চ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সম্মাননাও দেওয়া হয়। নতুন উদ্যোক্তারা তাদের কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করবে, ব্যবসা পরিচালন, পরিবেশন ও প্রকাশ, সেইসাথে নিজেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রতিটি পদক্ষেপে কিভাবে বাধা পেরুবে, সেই বিষয়গুলো শেখানো হয় কর্মশালায়। ৬৪ জেলা থেকে ১৬৪ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির টানা ৬০ দিনব্যাপী কর্মশালার দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হয়েছে গত পহেলা এপ্রিল। ইকবাল বাহার জানান, এক হাজার জন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এটা করতে পারলে আগামী দু’বছরে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দূর হবে বেকারত্ব। আর দেশের অর্থনীতির চাকার গতি তো বৃদ্ধি পাবেই। প্রতিদিন অনলাইন কর্মশালায় তিনঘন্টা ব্যয় করেন। সেখানে তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতেও কাউন্সিলিং করেন।
তরুণ প্রাণ ইকবাল বাহার বলেন, নিজে স্বপ্ন দেখি ও তরুণদের স্বপ্ন দেখাই। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া এই কাজ করে যাচ্ছি। গত দু’বছরে প্রায় ৫০ জন তরুণ-তরুণীর মাঝে এই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। তারা এখন অনেক লোককে চাকরি দিচ্ছে, এটা আমার কাছে বড় অর্জন। এই স্বপ্ন এখন আরও অনেক বড় হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের সাড়া পেয়ে আমি অভিভূত। তিনি আরো বলেন, চাকরি করার চেয়ে চাকরি দেওয়াটা অনেক গর্বের। উদ্যোক্তা হলেই একমাত্র সেই চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়।